মুন্সীগঞ্জে সাড়ে ১১ হাজার হেক্টর জমির আলু ক্ষতিগ্রস্ত
জুয়েল রানা, মুন্সীগঞ্জ
|
![]() জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, অগ্রহায়ণের মাঝামাঝি সময় থেকে এ জেলায় আলু রোপণ শুরু হয়েছে। গত শনিবার দুপুর পর্যন্ত ১৭ হাজারের বেশি জমিতে আলুবীজ রোপণ করা হয়। যেসব ক্ষেতে আলুর চারা গজিয়েছে বৃষ্টিতে সেগুলোর খুব একটা ক্ষতি হবে না বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানিয়েছে। কিন্তু দুয়েকদিনের মধ্যে যেসব ক্ষেতে আলু লাগানো হয়েছে, সেগুলো পচে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এদিকে কৃষকদের দাবি- এবার আলুবীজের দাম একটু কম হলেও সারের দাম অনেক বেশি ছিল। তাদের বেশি দাম দিয়ে সার কিনতে হয়েছে। বৃষ্টি কমলে নতুন করে আলু চাষ করতে তাদের আবার অর্থের দরকার। এ জন্য তারা সরকারের সহায়তা চেয়েছেন। অন্যদিকে আলুচাষে বিলম্ব ঘটায় উৎপাদন ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ কম হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সদর উপজেলার চরকেওয়ার ইউনিয়নের কৃষক মনসুর মাদবর বলেন, আমি গত সপ্তাহে ১২৬ শতাংশ জমিতে ডায়মন্ড আলু আবাদ করেছি। বৃষ্টিতে আমার ক্ষেতে পানি জমে গেছে। আমার এ জমিতে আলু আবাদে প্রায় দেড় লাখ টাকা খরচ হয়েছে। গতবছর আলুতে লাভ হয়নি। সামনে লাভ পাব, এ আশায় এবারও আলুর আবাদ করি। সদরের আরেক আলুচাষি রাসেল মিয়া বলেন, সাত দিন আগে জমিতে ৫০ হাজার টাকা খরচ করে আলু রোপণ করেছি। এর তিন দিন পরই টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় পুরো জমি। পানির নিচে থাকলে আলুগুলো নষ্ট হয়ে যাবে। এমনিতেই গত মৌসুমে আলুর দাম পাওয়া যায়নি। এ বছরও শুরুতে বড় ধাক্কা। এভাবে আলুর ব্যবসা আর ধরে রাখা সম্ভব নয়। গজারিয়া উপজেলার কৃষক জসিম প্রধান বলেন, গত সপ্তাহে দুটি জমিতে আলুবীজ রোপণ করেছি। এখন কড়ি গজানোর সময়। কিন্তু বৃষ্টিতে জমিতে পানি জমে গেছে। জমি চকের মাঝখানে থাকায় পানি সরাতে পারছি না। আল্লাহর ওপর ভরসা ছাড়া কিছুই করার নেই। গজারিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তৌফিক আহমেদ নুর বলেন, উপজেলায় এ মৌসুমে ২ হাজার ৪৬৫ হেক্টর জমি আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৪১০ হেক্টর জমিতে আলুবীজ রোপণ করা হয়েছে। পানি জমলে আলুবীজ নষ্ট হয়ে যাবে। এ উপজেলাটি নদীবেষ্টিত হওয়ায় কিছু আলু জমিতে জোয়ারের পানি ওঠার খবর পাওয়া গেছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। টঙ্গিবাড়ী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর উপজেলার প্রায় ৯ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ করা হবে। ইতোমধ্যে প্রায় অর্ধেক জমিতে আলু রোপণ করা হয়েছে। বাকি জমিতে আলু রোপণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন কৃষকরা। এর মধ্যে হঠাৎ অনাকাক্সিক্ষত বৃষ্টিতে কৃষকের জমিতে পানি জমে গেছে। এতে একদিকে রোপণ করা আলুতে পচন ধরেছে, অন্যদিকে আলু রোপণ করার জন্য প্রস্তুত করা জমিতে পানি জমে যাওয়ায় রোপণ কাজ বন্ধ রাখতে হচ্ছে। মুন্সীগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপপরিচালক কল্যাণ কুমার সরকার বলেন, চলতি বছর মুন্সীগঞ্জে ৩৭ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে, যার মধ্যে ১৭ হাজার ৭৮০ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ১১ হাজার ৬০০ হেক্টর জমির আলু বৃষ্টির পানিতে আক্রান্ত হয়েছে। যাদের জমিতে আলুগাছ হয়ে গেছে, তারা কিছুটা পরিত্রাণ পাবে। যারা দুয়েকদিনের মধ্যে বীজ রোপণ করেছে, তাদের বীজগুলো নষ্ট হয়ে যাবে এবং পুনরায় বীজ রোপণ করতে হবে। তবে নতুন করে আর সার দিতে হবে না। |