ডেঞ্জার জোনে বাংলাদেশ ঝুঁকিমুক্ত সাকিব
নাজমুল হক তপন
|
![]() এ বিষয়টা নিয়ে আলাপ হচ্ছিল সহকর্মীদের সঙ্গে। সবাই মোটামুটি একমত যে, নিউজিল্যান্ড না হয়ে জিম্বাবুয়ে সফর হলে হয়তো বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব সফরে যেতেন। এটা নিয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো নিউজিল্যান্ড সফরে যাচ্ছেন না সাকিব। গত চার বছরে বাংলাদেশ অংশ নিয়েছে ২৬ টেস্টে। এর মধ্যে সাকিব খেলেছেন মোটে ৮ টেস্ট। সবথেকে বড় কথা, কঠিন সফরগুলো এড়িয়ে গেছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। এটা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় ডেঞ্জার জোন দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড। আমাদের জন্য সম্পূর্ণ বিরুদ্ধ কন্ডিশন। পেস আশীর্বাদপুষ্ট উইকেটের সঙ্গে মানিয়ে নিতে গলদঘর্ম হতে হয় টাইগারদের। চার বছর আগে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যাননি সাকিব। বাংলাদেশ ঝুঁকির মুখে থাকলেও সেটা সাকিবকে স্পর্শ করেনি। নিজেকে ঝুঁকিমুক্তই রাখেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। এরপর থেকে এটা একটা নিয়মিত চিত্র। কঠিন সফরগুলো থেকে নিজেকে সরিয়ে নিচ্ছেন সাকিব। ![]() এ সময়ে ভয়ঙ্কর দল নিউজিল্যান্ড। সর্বশেষ বিশ্বটেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপাও তাদের হাতে। এমনিতেই নিজেদের কন্ডিশনে কিউইরা প্রায় অজেয়। সম্প্রতি স্বাগতিক ভারতের কাছে হেরে টেস্ট শীর্ষচ্যুত হয়েছে দলটি। এই ঝাল যে তারা বাংলাদেশের ওপর মেটাতে চাইবে এটা অনুধাবন করতে প্রয়োজন পড়ে না বিশেষজ্ঞ হওয়ার। বিপরীতে চরম দুরাবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপ মূলপর্ব থেকে হারে হারে বিপর্যস্ত টাইগাররা। ঘরের মাটিতেও পাকিস্তানের বিপক্ষে ন্যূনতম প্রতিরোধটুকু গড়ে তুলতে পারেনি বাংলাদেশ। টপ অর্ডার সুপার ফ্লপ। মিডল অর্ডার ভঙ্গুর। সব থেকে বাজে অবস্থা পেস বোলিংয়ে। নতুন বল। মেঘলা আকাশ। বৃষ্টিস্নাত ভেজা উইকেট। কিন্তু আমাদের পেসাররা ন্যূনতম চাপও তৈরি করতে পারেনি পাকিস্তান ব্যাটারদের ওপর। পেস আশীর্বাদধন্য নিউজিল্যান্ডের উইকেটে আমাদের পেস ব্যাটারি কতটুকু কী করতে পারবে তা নিয়ে আশাবাদী হওয়াটা কঠিন। আর ঘরের মাঠে আমাদের স্পিনাররা বাঘ হলেও নিউজিল্যান্ডের মাটিতে যে নখদন্তহীন হবে তা বলাই বাহুল্য। সাকিবের থাকা আর না থাকার পার্থক্যটি বাংলাদেশের জন্য খুবই ব্যাপক। সেরা একাদশ সাজানোই কঠিন হয়ে পড়ে। পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টেস্টের দিকে তাকালেই বিষয়টা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সাকিব না থাকায় চার স্পেশালিষ্ট বোলার নিয়ে টেস্ট খেলতে হয়েছে। প্রথম ইনিংসে পাকিস্তান ব্যাটিং করেছিল ১১৬.৪ ওভার। এর মধ্যে তাইজুল ইসলাম একাই বোলিং করেন ৪৪.৪ ওভার। পরিস্থিতি খুব ভালোভাবেই অনুধাবন করতে পারছেন সাকিব। ২০১৭ সালের সফরে ওয়েলিংটনের বেসিন রিজার্ভ সিরিজের প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ২১৭ রানের ইনিংস খেলেছিলেন সাকিব। তারপরও ওই টেস্টে হারের লজ্জায় মাখামাখি হয়েছিল টাইগাররা। ওই সময়ের তুলনায় বর্তমান বাংলাদেশ আরও দুর্বল, আরও ভঙ্গুর। ওই সময় দলে ছিলেন দেশ সেরা ওপেনার তামিম ইকবাল, ছিলেন লড়াকু মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তারপরও সাকিবের ডাবল সেঞ্চুরি দলের হার এড়াতে পারেনি। এবারের পরিণতি আরও খারাপ হতে পারে এমন আশঙ্কাটাই প্রবল। ক্রিকেট তো বটেই, বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে সাকিব সবচেয়ে মেধাবী এবং চরম পেশাদারও। আলগা আবেগে ভাসার মানুষ নন বিশ^সেরা অলরাউন্ডার। নিজের শক্তি-সামর্থ্য বাঁচিয়ে রাখাটাকেই শ্রেয় জ্ঞান করেছেন সাকিব। আর বিশ^কাপ থেকেও এটাও স্পষ্ট যে, তিনি নিজের সেরা ছন্দে নেই। এ অবস্থায় একজন পেশাদার হিসেবে নিজের সমৃদ্ধ ক্যারিয়ারকেই নিরাপদ রাখতে চেয়েছেন বিশ^সেরা অলরাউন্ডার। দেশ ঝুঁকিতে, এটা সাকিবের কাছে খুব বড় বিষয় নয়। চরম পেশাদাররা বাজি ধরেন সম্ভাবনার ওপর। এই পথটাই নিয়েছেন সাকিব। স্বভাবতই প্রশ্নটা এসেই যায়, সাকিব কি আবেগে ভাসেন না? সম্প্রতি মিরপুর স্টেডিয়ামে বৃষ্টির মধ্যে মাঠে জমা পানিতে তার ডাইভ দেওয়ার ছবিটি আলোচনার কেন্দ্রে। বেশিরভাগ পত্রিকায় লেখা হয়েছে, শৈশবে ফিরে গেলেন সাকিব। সাকিবের ক্ষুরধার মস্তিষ্ক খুব ভালোভাবে জানে যে, কোনটা মানুষকে চমৎকৃত করে সর্বোপরি কোনটা ভাইরাল হয়। সাকিবের এই অ্যাথলেটিক অ্যাপ্রোচ থেকে এটা সুস্পষ্ট যে, সাকিব খুব ভালোমতোই ফিট আছেন। তবে বাস্তবতা এটাই যে, মানসিক ও শারীরিকভাবে সবচেয়ে ফিট ও একই সঙ্গে সবচেয়ে কার্যকর অস্ত্রটিকে ছাড়াই নিউজিল্যান্ড সফরে যাচ্ছে বাংলাদেশ। দেশের স্বার্থে সাকিবকে সর্বোত্তম কাজে লাগানোর স্পিরিট আর যাই হোক আমাদের ক্রিকেট অভিভাবক বিসিবির নেই। চরম অপেশাদারিত্ব আর স্বেচ্ছাচারিতার কারণে ক্রিকেটারদের সঙ্গে বোর্ড কর্তাদের দূরত্ব বাড়ছে দিনকে দিনই। ক্রিকেটারদের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করার মতো নৈতিক জোর বিসিবি হারিয়ে ফেলেছে আগেই। আর তাই নিজের পথ নিজে দেখে নেওয়ার কাজটাও সহজ হয়ে গেছে সাকিবের জন্য।
|