বিজয়ের ৫০ বছর : অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ
রেজাউল করিম খোকন
|
![]() ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্জনের জন্য এসডিএসএনসহ কয়েকটি সংস্থা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পুরস্কৃত করেছে। সংস্থাগুলো বাংলাদেশের অবস্থা বিশ্লেষণ করেছে এবং মূল্যায়ন করে দেখেছে- বাংলাদেশ বিস্ময়কর সাফল্য অর্জন করছে। আধুনিক যুগে যে কজন মহান বাঙালি তাদের নিখুঁত মেধা ও সুনিপুণ চিন্তা-ভাবনার আলোকছটায় বাঙালি জাতিকে বেঁচে থাকার নিরবচ্ছিন্ন প্রেরণা জুগিয়েছেন, তাদের মধ্যে শীর্ষে অবস্থান করছেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাংলাদেশের মহান স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ঔপনিবেশিক ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তির নাগপাশ হতে মুক্ত করে তিনি বাঙালি জাতিকে শুধু একটা দেশই উপহার দেননি, সদ্য স্বাধীন হওয়া একটি ভঙ্গুর অর্থনীতির দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাঠামো কেমন হবে- তারও একটি যুগোপযোগী রূপরেখা দাঁড় করিয়েছিলেন। বাংলাদেশকে নিয়ে তাঁর উন্নয়ন চিন্তা আজ সর্বজনবিদিত ও বহুল আলোচিত। আজকের বাংলাদেশের যে সমৃদ্ধি, উন্নয়নের মহাসোপানে যে অভিযাত্রা তার সূচনা করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কীভাবে এদেশের মানুষের ভাগ্য বদলে যাবে, উন্নত সমৃদ্ধ জীবনযাপন করতে পারবে সেই সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখতেন বঙ্গবন্ধু। বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছিলেন মাত্র কয়েক বছরেই। তাঁর সূচিত বিভিন্ন কর্মসূচি এবং পদক্ষেপ দ্রুতই সুফল বয়ে আনতে শুরু করেছিল। পঞ্চাশ বছর আগেই বঙ্গবন্ধু উন্নয়নের যে নতুন চিন্তাধারার সূচনা করেছিলেন তা এখনও অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। তাঁর অসাধারণ প্রজ্ঞা ও দূরদৃষ্টি এবং দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য আকুলতা প্রতিটি পদক্ষেপ ও কর্মকাণ্ডে বারবার ফুটে উঠেছে। আজকের বিশ্বখ্যাত অর্থনীতিবিদ উন্নয়ন বিশেষজ্ঞরাও বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন ভাবনার অসাধারণত্ব অকপটে স্বীকার করছেন। নির্মম ঘাতকের বুলেট তাঁর সেই পথ চলাকে রুদ্ধ করে দিলেও বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির যে পথ দেখিয়ে দিয়ে গেছেন তা থেকে মাঝখানে বিচ্যুত হলেও বাংলাদেশ আবার সেই পথ ধরেই এগোচ্ছে। গত পাঁচ দশকে নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে বাংলাদেশ আজ সম্মানজনক একটি পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়ন অর্জনের পেছনে জনগণের সঙ্গে থেকে অধ্যবসায়ের সঙ্গে যে মানুষটি নিরলস শ্রম ও মেধা দিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার দীক্ষা কল্যাণমন্ত্রে, যে কারণে উন্নয়নের ব্রত সাধনায় নিজেকে নিয়োজিত রাখেন সর্বক্ষণ। দেশের মানুষকে প্রাধান্য দিয়ে তিনি দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন। ৫০ বছরের পথপরিক্রমায় অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে বাংলাদেশের অগ্রগতি ঈর্ষণীয়। শুধু তাই নয়, পাকিস্তান এবং প্রতিবেশী দেশ ভারত স্বাধীনতা অর্জনের ৭৪ বছরে যে সফলতা অর্জন করতে পারেনি, বাংলাদেশ তা করে দেখিয়েছে গত ৫০ বছরে। দিন দিন সামাজিক, রাজনৈতিক কাঠামোর পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে গেছে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কাঠামো। এটা আরোপিতভাবে নয়, স্বাভাবিক নিয়মেই ঘটেছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে ধীরে ধীরে নানা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অর্থনীতিতে অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। কৃষিনির্ভর অর্থনীতি ছিল একসময় এ অঞ্চলে। কিন্তু সেই কৃষিনির্ভর অর্থনীতি থেকে ক্রমশ বেরিয়ে এসে শিল্প ও সেবা খাতমুখী হয়েছে আমাদের অর্থনীতি। বিস্ময়কর অগ্রগতি ঘটেছে কৃষি খাতে। করোনার দুঃসময়ে আমাদের রফতানি আয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, বরং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের হার বেড়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভও বেড়েছে। বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় এখন ২৫৫৪ ডলার। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ডিজিটাল ফিন্যান্সের দ্রুত বিকাশ ঘটেছে গত এক দশক সময়ে। এই অগ্রগতির উজ্জ্বল প্রকাশ লক্ষ করা যায় অর্থনীতিতে ডিজিটাল ফিন্যান্সের অভাবনীয় উন্নয়ন। উদ্ভাবনী ক্ষমতার চর্চা এবং ডিজিটালাইজেশন বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করবে আশা করা যায়। উচ্চাভিলাসী হলেও সরকারি এবং বেসরকারি নানা উদ্যোগ এ প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিচ্ছে। সরকারি বিভিন্ন আর্থিক অনুদান, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, বিভিন্ন ধরনের ভাতা খুব সহজে সুবিধাভোগীর হাতে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে ডিজিটাল ফিন্যান্স বা আর্থিক ব্যবস্থা অত্যন্ত কার্যকর মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। দেশের সর্বস্তরের জনগণকে আর্থিক সেবার আওতায় নিয়ে আনাটা মস্তবড় চ্যালেঞ্জ ছিল। সে চ্যালেঞ্জে জয়ী হয়েছে বাংলাদেশ। দেশের বেশিরভাগ মানুষ ব্যাংকিং সেবার আওতার বাইরে থাকায় তাদের পক্ষে আর্থিক লেনদেন বেশ কঠিন ছিল। কিন্তু ডিজিটাল ফিন্যান্স তাদের আর্থিক লেনদেনের চমৎকার সুযোগ এনে দিয়েছে। ২০০৫ সালেও দেশে যেখানে অতিদারিদ্র্যের হার ছিল ৪৩ শতাংশ, গত ১৬ বছরের ব্যবধানে তা বেশ কমে এসেছে। বিশে^র খুব কম দেশই এ সাফল্য দেখাতে পেরেছে। টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে এ দেশ অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের কাছে অনুকরণীয় হতে পারে। বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশে ধারাবাহিকভাবে অতিদারিদ্র্যের হার কমেছে। এই প্রবণতাকে বাংলাদেশের একটি বড় অর্জন হিসেবে মনে করছে বিশ্বব্যাংক। মূলত শিক্ষাক্ষেত্রে লিঙ্গসমতা ও সফল পরিবার-পরিকল্পনা কর্মসূচি বাস্তবায়ন এদেশের দারিদ্র্য বিমোচনে বড় ধরনের সহায়তা করেছে। কয়েক বছর ধরে সরকারের নেওয়া সমন্বিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার কারণে এ সাফল্য এসেছে। সরকার সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্রের আওতায় নেওয়া কর্মসূচি ব্যাপকভাবে বাড়িয়েছে। পাশাপাশি সারা দেশে সড়ক নেটওয়ার্কের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। গ্রাম-উপজেলা-জেলাসহ সব ক্ষেত্রে সড়ক অবকাঠামোর ব্যাপক উন্নতি হওয়ায় এর সুফল পাচ্ছে সাধারণ জনগণ। এখন গ্রামের সাধারণ কৃষক তার উৎপাদিত পণ্য খুব সহজে শহরে আনতে পারছে। মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নেও এসব কর্মসূচি ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশের দারিদ্র্য কমার প্রধান কারণ, এদেশের মানুষের আয় সক্ষমতা বেড়েছে। অর্থনৈতিক উচ্চ প্রবৃদ্ধি, দারিদ্র্যের হার হ্রাস, শিক্ষা, স্বাস্থ্য যোগাযোগ খাতে অদ্ভুত সাফল্যের কারণে বিশে^র বুকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত। এক সময়ের দারিদ্র্যপীড়িত দেশটি আজ এশিয়ার ‘এনার্জিং টাইগার’। করোনা মহামারিতে সারা বিশ্বই স্থবির হয়ে আছে। বড় বড় অর্থনীতির দেশগুলোও বিপর্যস্ত, পরিস্থিতি মোকাবিলায় দিশাহারা। ঠিক তখনই প্রধানমন্ত্রী জীবন ও জীবিকাকে সমান গুরুত্ব দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য একগুচ্ছ আর্থিক প্রণোদনা ও জনগণের করণীয় সম্পর্কে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন। যার ফলে করোনা পরিস্থিতি বাংলাদেশ সফলভাবে মোকাবিলা করে যাচ্ছে। বলা হয়, সঙ্কটেই নেতৃত্বের পরীক্ষা। ঘূর্ণিঝড় আম্ফান ও দীর্ঘস্থায়ী করনার কারণে শতাব্দীর ভয়াবহ সঙ্কটের পরও মানুষের জীবনকে স্বাভাবিক রাখতে তার নেতৃত্ব বিশ্বসম্প্রদায়েরও প্রশংসা কুড়িয়েছে। গতিশীল নেতৃত্বে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করে ভিশন-২০২১ ও ভিশন-২০৪১-এর মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। বাংলাদেশকে উন্নত দেশের মহাসড়কে নিতে কাজ চলছে ১০টি মেগা প্রকল্পের। ২০০৯ সালে জনগণের নিরঙ্কুশ ম্যান্ডেট নিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। টানা তিন মেয়াদের দেশ পরিচালনা করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উন্নয়নের কারিগর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়। উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে নিয়েছেন বেশ কিছু মেগা প্রকল্প। কিছু কিছু প্রকল্পের সুফল জনগণ ইতোমধ্যেই ভোগ করতে শুরু করেছে। মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের পর বাংলাদেশ আরও বদলে যাবে। তখনই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠিত হবে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন অপ্রতিরোধ্য গতিতে রূপকল্প ২০৪১ অর্জনে এগিয়ে যাচ্ছে। টানা তিন মেয়াদের দেশ পরিচালনায় উন্নয়নের কারিগর, শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়। লেখক: অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার |