ই-পেপার শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪

ইবাদতে লৌকিকতা নয়
প্রকাশ: রবিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২১, ৬:৩৭ এএম  (ভিজিট : ১২২১)
আল্লাহ তায়ালা মানুষ বানিয়েছেন তাঁর ইবাদতের উদ্দেশ্যে। তাঁকে খুশি করার নিমিত্তে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি জিন ও মানুষ সৃষ্টি করেছি কেবল আমার ইবাদতের জন্য।’ (সুরা যারিয়াত : ৫৬)। এই ইবাদত-আরাধনা হতে হবে কেবল আল্লাহর উদ্দেশ্যে। কেননা তিনি ছাড়া আর কেউ ইবাদতের উদ্দিষ্ট হওয়ার যোগ্যতা রাখে না। কালেমা তাইয়্যেবার মর্মার্থও এটা। এ প্রসঙ্গে কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘তোমরা একনিষ্ঠ মনে আল্লাহকে ডাকো, যদিও কাফেররা সেটা অপছন্দ করে।’ (সুরা গাফির : ১৪)। আল্লাহকে ছাড়া কোনো মানুষের জন্য ইবাদত করাকে বলা হয় রিয়া বা লৌকিকতা।

মানুষকে দেখানো ও তাদের প্রশংসা কুড়ানোর জন্য ইবাদত করাকে কোরআনে মুনাফিকদের গুণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বর্ণিত হয়েছে, ‘নিশ্চয় মুনাফিকরা আল্লাহর সঙ্গে প্রতারণা করে আর আল্লাহও তাদের সমুচিত জবাব দেন। যখন ওরা নামাজে দাঁড়ায় তো অলসভাবে দাঁড়ায়। এতটুকু করে মানুষকে দেখানোর জন্য। আর তারা খুব কমই আল্লাহকে স্মরণ রাখে।’ (সুরা নিসা : ১৪২)

আর মুনাফিকরা হবে জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরের অধিবাসী। রিয়ার কারণে আমলের সওয়াব পুরোটা নষ্ট হয়ে যায়। বর্ণিত হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা দানগ্রহীতাকে খোঁটা মেরে কষ্ট দিয়ে লোক দেখানো দানশীলদের মতো নিজেদের দানের সওয়াব নষ্ট করো না।’ (সুরা বাকারা : ২৬৪)। শুধু তাই নয়; লোক দেখানো আমলকে হাদিসে শিরকতুল্য গণ্য করা হয়েছে। বর্ণিত হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি মানুষকে দেখাতে নামাজ পড়ল অথবা রোজা রাখল কিংবা দান-সদকা করল সে মূলত শিরক করল।’ (তারগিব-তারহিব : ১/৫১)। অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আমি তোমাদের ব্যপারে ছোট শিরকে লিপ্ত হওয়ার সবচেয়ে বেশি ভয় করছি। সাহাবায়ে-কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, ছোট শিরক কী? উত্তরে বললেন, সেটা হলো রিয়া।’ (শরহু কিতাবিত তাওহিদ, হাদিস : ৫৯) 

রিয়ার কারণে অন্তরে অহঙ্কার সৃষ্টি হয়। কারণ মানুষকে দেখিয়ে আমল করার পেছনে অন্যতম উদ্দেশ্য থাকে তাদের কাছে নিজেকে বড় করে তোলা। সবাই যেন তাকে পরহেজগার-মুত্তাকি মনে করে। এভাবে তার মধ্যে অহঙ্কার সৃষ্টি হয়। আর অহঙ্কারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না। হাদিসে এসেছে, ‘যার অন্তরে সরিষা দানা পরিমাণ অহঙ্কার থাকবে সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।’ (আবু দাউদ : ৪০৯১)। জাহান্নামেও সর্বপ্রথম নিক্ষেপিত হবে এই লোক দেখানো আমলকারীরা। 

রিয়া থেকে বাঁচার দুটো উপায় রয়েছে- ১. মৃত্যুর কথা বেশি বেশি স্মরণ করা। দুনিয়ার নশ্বরতাকে সবসময় মনে জাগ্রত রাখা। তাতে দুনিয়ার মোহ কমবে। যশ-খ্যাতির মোহই মূলত রিয়া তথা লৌকিকতায় উদ্বুদ্ধ করে। এই মোহ দূর করতে পারলে রিয়া দূর করা সম্ভব হবে। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘দুনিয়ার মোহ সব পাপের উৎস।’ ২. যথাসম্ভব নির্জনতা অবলম্বন করা। এতে করে আল্লাহর প্রতি একাগ্রতা বাড়বে। 

মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক কমে যাবে। তাদের কাছে নিজেকে বড় দেখানোর খায়েশও জাগবে না। তখন আর লৌকিকতার প্রয়োজন পড়বে না। (মুখতাসারারুল মাকাসিদ : ৩৫৯)। আল্লাহ তায়ালা আমাদের আমলকে রিয়ামুক্ত রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।

শিক্ষক, অ্যারাবিক মডেল মাদ্রাসা, উত্তরা, ঢাকা




সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close