ফজরের নামাজের মাহাত্ম্য ও পুরস্কার
হাবীবুল্লাহ আল মাহমুদ
|
![]() আল্লাহর আশ্রয় লাভ : মানুষ জীবনের নিরাপত্তার জন্য কত পেরেশান থাকে! অথচ আল্লাহ নিজেই মানুষকে তাঁর আশ্রয়ে স্থান দেন এবং তার জিম্মাদারি গ্রহণ করেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ আদায় করে, সে ব্যক্তি আল্লাহর জিম্মায় চলে যায়। অর্থাৎ স্বয়ং আল্লাহ ওই ব্যক্তির দায়িত্ব নেন।’ (মুসলিম : ৬৫৭) আল্লাহর দিদারের প্রতিশ্রুতি : একজন মানুষের সবচেয়ে বড় পাওয়া হলো আল্লাহর দিদার ও দর্শন লাভ। যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ আদায় করবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতের সবচেয়ে বড় নেয়ামত দান করবেন। অর্থাৎ সে আল্লাহর দিদার লাভ করবে এবং জান্নাতি ওই ব্যক্তি আল্লাহকে পূর্ণিমা রাতের আকাশের চাঁদের মতোই স্পষ্ট দেখবে। (বুখারি : ৫৫৩)। জাহান্নাম থেকে মুক্তি : জাহান্নাম অতি কষ্টদায়ক জায়গা। নিয়মিত ফজর নামাজ আদায়ে জাহান্নাম থেকে মুক্তি মিলবে এবং জান্নাত হবে তার ঠিকানা। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিয়মিত ফজরের নামাজ আদায় করবে, সে কখনই জাহান্নামে প্রবেশ করবে না।’ (মুসলিম : ৬৩৪)। অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ফজরের নামাজ আদায় করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (বুখারি : ৫৭৪) ফেরেশতাদের সাক্ষ্য দান : বিচারের দিনে প্রতিটি মানুষের প্রয়োজন হবে সাক্ষী ও প্রমাণের। ফজরের নামাজ আদায় করলে ফেরেশতারা সেই মানুষের পক্ষে সাক্ষ্য দান করবেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ আদায় করবে, আল্লাহর ফেরেশতারা আল্লাহর কাছে ওই ব্যক্তিকে ভালো মানুষ হিসেবে সাক্ষ্য দেবে।’ (বুখারি : ৫৫৫) সারারাত নফল আদায়ের সওয়াব : রাতের আমল আল্লাহর কাছে অনেক প্রিয়। কেউ যদি রাতের আরামের ঘুম বিসর্জন দিয়ে ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামাজ পড়ে, এর জন্য আল্লাহ খুশি হয়ে তাকে সারারাত নফল নামাজ পড়ার সওয়াব দেবেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করে, আল্লাহ তার আমলে সারারাত দাঁড়িয়ে নফল নামাজ আদায়ের সওয়াব দিয়ে দেন।’ (মুসলিম : ৬৫৬) কেয়ামতের দিন বিশেষ নূর : হাশরের মাঠে মানুষ অন্যরকম এক পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে। সবাই অস্থির ও পেরেশান থাকবে। বিশেষ করে পুলসিরাত পার হওয়ার সময় অন্ধকার দূর করার জন্য আলোর দরকার হবে। সেদিন যার যার আমল হবে নূর ও আলো। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ভোরে হেঁটে ফজরের নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদে প্রবেশ করবে, আল্লাহ কেয়ামতের দিন তাকে পরিপূর্ণ আলো দান করবেন।’ (আবু দাউদ : ৪৯৪)। ফজরের সুন্নতের ফজিলত : প্রত্যেক ফরজ নামাজের আগে-পরে যেসব সুন্নত নামাজ রয়েছে এর সবচেয়ে ফজিলতপূর্ণ সুন্নত হলো ফজরের দুই রাকাত সুন্নত। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘ফজরের দুই রাকাত সুন্নত দুনিয়া ও দুনিয়ার মধ্যে যা কিছু আছে তার চেয়ে উত্তম।’ (মুসলিম : ৭২৫)। তা ছাড়া ফজরের সুন্নতের ব্যাপারে ইসলামের বিশেষ নির্দেশনাও আছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা এই দুই রাকাত নামাজ কখনও ত্যাগ করো না, এমনকি শত্রুবাহিনী তোমাদের তাড়া করলেও।’ (আবু দাউদ : ১২৫৮)। তবে কখনও যদি ফজরের জামাত দাঁড়িয়ে যায় আর দ্বিতীয় রাকাত পাওয়ারও সম্ভাবনা থাকে, তা হলে সুন্নত মসজিদের বাইরে পড়ে নেওয়া উত্তম। তবে কেউ যদি মসজিদের ভেতরে নামাজের কাতার থেকে দূরে এক কোণে বা খুঁটির আড়ালে পড়ে সেটাও জায়েজ। কিন্তু জামাতের কাতারে বা তার কাছে পড়া মাকরুহে তাহরিমী। (কিফায়াতুল মুফতি : ৪/৫৫১)। আল্লাহ তায়ালা আমাদের ফজরের নামাজ গুরুত্বসহ আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন। (আগামী শনিবার পড়ুন- জোহরের নামাজের মাহাত্ম্য ও পুরস্কার) |