ই-পেপার শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪

বিশ্ব বাজারে কমল জ্বালানি তেলের দাম, দেশে কমবে কবে
প্রকাশ: শুক্রবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২১, ৮:৫০ এএম আপডেট: ০৩.১২.২০২১ ৮:৫১ এএম  (ভিজিট : ৩৮৫)
গত এক মাস ধরে বিশ্ববাজারে কমে আসছে জ্বালানি তেলের দাম। নভেম্বরের শুরুতে প্রতি ব্যারেল রিফাইন্ড বা পরিশোধিত জ্বালানি তেলের মূল্য ছিল ৯৭ থেকে ৯৮ ডলার। ডিসেম্বরের শুরুতে সেটি নেমে এসে দাঁড়িয়েছে ৭৮ ডলারে। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে ব্যারেলপ্রতি দাম কমেছে ২০ ডলার। প্রায় একই হারে দাম কমেছে ক্রুড অয়েলেরও। এক মাস আগে বিশ্ববাজারে প্রতি ব্যারেল ক্রুড অয়েলের দাম ছিল ৯০ ডলার, এখন সেটা নেমে এসেছে ৬৯ ডলারে। বৃহস্পতিবার বিশ্ববাজারে প্রতি ব্যারেল ক্রুড অয়েল বিক্রি হয়েছে ৬৯ দশমিক ১৮ ডলারে। জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সময় চলে এসেছে দেশের বাজারেও জ্বালানি তেলের দাম কমানোর। তবে কবে কমবে দেশের বাজারে জ্বালানি তেলের দাম- এ প্রশ্ন এখন সবার।

অন্যদিকে বিশ্ববাজারে দাম কমে আসায় গত এক মাসে ২৯ কোটি টাকা লাভ বেশি হয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি)। কারণ নভেম্বরে প্রতি লিটারে বিপিসির লাভ হতো ১ টাকা ১৮ পয়সা। সে লাভের পরিমাণ এখন বেড়ে হয়েছে ১ টাকা ৬০ পয়সা। প্রতি মাসে প্রায় ৫ লাখ টন বা ৫০ কোটি লিটার জ্বালানি তেল আমদানি করে বিপিসি। ১ ডলার সমান ৮৫ টাকার হিসাবে নভেম্বরে বিপিসির লাভ হতো ৫৯ কোটি টাকা। এখন হচ্ছে ৮০ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে বিপিসির লাভ বেড়েছে ২৯ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা ড. শামসুল আলম সময়ের আলোকে বলেন, সরকার দেশের বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে বিশ্ববাজারে দাম বৃদ্ধির কারণে। গত এক মাসে ধারাবাহিকভাবে দাম কমে আসছে বিশ্ববাজারে। ব্যারেলপ্রতি দাম কমেছে ২০ ডলারেরও বেশি। সুতরাং সময় এসেছে দেশের বাজারেও কমানোর। ক্যাবের পক্ষ থেকে আমাদের দাবি, ডিসেম্বরের মধ্যেই যেন দেশের বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমানো হয়। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে দেশের মানুষের কষ্ট বেড়েছে। সরকারের এখন দায়িত্ব দাম কমিয়ে দেশের মানুষকে কিছুটা স্বস্তি দেওয়া। আমরা দেখেছি গত বুধবার অর্থমন্ত্রী এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, বিশ্ববাজারে দাম কমায় দেশের বাজারেও সমন্বয় করার সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা এখন অপেক্ষায় আছি অর্থমন্ত্রীর এ বক্তব্য কবে বাস্তবায়ন করা হয়। 

বিপিসি সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের চেয়ে পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করা হয় বেশি পরিমাণ। প্রতিবছর ৬৫ লাখ টন জ্বালানি তেল আমদানি করা হয়। এর মধ্যে ৪০ লাখ টনই ডিজেল। অকটেন, পেট্রোল ও জেট ফুয়েল মিলে আমদানি করা হয় ১০ লাখ টন। বাকি ১৫ লাখ টন আমদানি করা হয় ক্রুড অয়েল। ডিজেলের দাম যখন বাড়ানো হয়, তখন প্রতি ব্যারেল জ্বালানি তেল আমদানিতে বিপিসির ব্যয় হতো ৯৭ থেকে ৯৮ ডলার। এর সঙ্গে যুক্ত হয় প্রিমিয়াম বাবদ আরও ২ দশমিক ৮৩ ডলার। সব মিলিয়ে ১০০ ডলারের বেশি খরচ হতো। দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশের বাজারে ডিজেলের দাম প্রতি লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়ে ৬৫ টাকা থেকে ৮০ টাকায় উন্নীত করা হয়। কিন্তু নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমতে শুরু করে। ডিজেল আগের দামে বিক্রি করতে হলে প্রতি ব্যারেল ৭৪ ডলারে নামতে হবে। কিন্তু এরপরও প্রায় সাত ডলার প্রতি ব্যারেলে কমে গেছে। এর প্রভাব স্থানীয় বাজারে এখনও পড়েনি। 

দেশের বাজারে দাম কমানোর বিষয়ে জানতে চাইলে বিপিসির মহাব্যবস্থাপক (অর্থ) মণি লাল দাস গতকাল সময়ের আলোকে বলেন, দাম কমানোর বিষয়টি অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে- বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ৬৫ ডলারের নিচে নামতে হবে। এ পর্যায়ে নেমে আসার পর অন্তত আরও এক থেকে দেড় মাস বাজার পর্যবেক্ষণ করে তবেই দেশের বাজারে দাম কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। এখন যে হারে দাম কমছে তাতে হয়তো দুয়েক সপ্তাহের মধ্যে ৬৫ ডলারের কাছাকাছি চলে আসতে পারে। তখন আরও কমে কি না আমরা দেখব। এরপর দেশের বাজারে সমন্বয় করা হতে পারে। 

তিনি আরও বলেন, দেশের বাজারে কিন্তু হুট করেই জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়নি। গত মে মাসের ১৪ তারিখ বিপিসি ব্রেক ইভেনে ছিল। কিন্তু এরপর থেকেই দাম বাড়তে থাকে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম। তখন থেকেই বিপিসিও লোকসান দেওয়া শুরু করে। গত মে মাস থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এ ৭ মাসে বিপিসি লিটারপ্রতি গড়ে ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত লোকসান দিয়ে এসেছে। নভেম্বর থেকে লাভের মুখ দেখছে। সুতরাং ৭ মাস বাজার পর্যালোচনা করে তবেই দেশের বাজারে দাম বাড়ানো হয়েছে জ্বালানি তেলের। 

অন্যদিকে বিপিসি সূত্রে জানা গেছে, গত ২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ অর্থবছরে সরকার বিপিসির কাছ থেকে নিয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা। আর লাভ দিয়েছে ৬০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ দুই বছরে সরকার বিপিসির কাছ থেকে নিয়েছে ১০ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।
 
বিপিসি সূত্রে আরও জানা যায়, সঙ্কটকালে বিবেচনা করে বিপিসির স্টোরেজ সক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে ২ লাখ ৫০ হাজার টন। এখন পর্যন্ত ১২ লাখ টনের স্টোরেজ সক্ষমতা রয়েছে মাত্র ৪২ দিনের জন্য। আগামী দুই বছরের মধ্যে আরও ২ লাখ ৫০ টন স্টোরেজ সক্ষমতা বাড়িয়ে মোট ১৪ লাখ ৫০ হাজার টন করা হচ্ছে এবং সেটি ৯০ দিনের জন্য।


আরও সংবাদ   বিষয়:  জ্বালানি তেল  




সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close