প্রকাশ: শুক্রবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২১, ১:৫৮ এএম (ভিজিট : ২৬৪)
শনাক্ত হওয়ার চার সপ্তাহেরও কম সময়ে করোনাভাইরাসের ব্যাপক রূপান্তরিত ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন দক্ষিণ আফ্রিকায় দ্রুত আধিপত্যশীল হয়ে উঠছে। নতুন এই হুমকির বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে সীমান্ত কড়াকড়ি আরোপের হিড়িকের মধ্যে বুধবার দেশটির স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ এ তথ্য জানিয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন, করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়ে ওঠা ব্যক্তিরাও আক্রান্ত হতে পারেন ভাইরাসটির রূপান্তরিত ধরন ওমিক্রনে। তবে টিকা নেওয়া থাকলে গুরুতর অসুস্থতা থেকে সুরক্ষা পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন তারা। এদিকে বৃহস্পতিবার ভারতেও ওমিক্রনে আক্রান্ত ২ রোগী শনাক্ত হয়েছে।
গত ৮ নভেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে জনবহুল প্রদেশ গোয়েটেং থেকে সংগৃহীত একটি নমুনায় প্রথম ভ্যারিয়েন্টটি পাওয়া যায়। ২৪ নভেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম এই ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। দক্ষিণ আফ্রিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর কমিউনিকেবল ডিজিজেস (এনআইসিডি) বলেছে, গত মাসে যতগুলো নমুনার জিনোম সিকোয়েন্স করা হয়েছে তার প্রায় ৭৪ শতাংশেই নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে। মঙ্গলবার দক্ষিণ আফ্রিকায় ৪ হাজার ৩৭৩ জনের করোনা শনাক্ত হলেও বুধবার সেই সংখ্যা ৮ হাজার ৪৬১ জনে পৌঁছেছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার এই স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, মাত্র একদিনের ব্যবধানে মঙ্গলবারের তুলনায় বুধবার দক্ষিণ আফ্রিকায় ওমিক্রনে আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। এদিকে, ওমিক্রন কতটা সংক্রামক তা আগামী কয়েকদিনের মধ্যে জানা যাবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মারিয়া ভ্যান কেরখোভ।
বিজ্ঞানীদের হুঁশিয়ারি : দক্ষিণ আফ্রিকার সংক্রামক রোগ গবেষণা সংস্থা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর কমিউনিকেবল ডিজিজেসে কর্মরত বিশেষজ্ঞ অ্যানি ভন গোটবার্গ ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘গবেষণায় আমরা জানতে পেরেছি যে, করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়ে ওঠা ব্যক্তিরাও ওমিক্রণের সংক্রমণ থেকে নিরাপদ নয়। ভাইরাসের এই ধরনটি তাদেরও আক্রান্ত করতে পারে।’
এএফপিকে গোটবার্গ জানান, দক্ষিণ আফ্রিকায় ওমিক্রনে আক্রান্ত যত রোগী এ পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রোগীরই আগে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ইতিহাস রয়েছে। তিনি বলেন, ‘ডাক্তারদের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। তারাই আমাদের এ তথ্য জানিয়েছেন এবং আমাদের বিশ্বাস শুধু রাজধানীতেই (জোহানেসবার্গ) নয়, পুরো দেশে একই অবস্থা। তবে আমরা এটিও বিশ্বাস করি যে, করোনার টিকা এখনও এই ধরনে আক্রান্ত হওয়ার পর গুরুতর অসুস্থতা থেকে সুরক্ষা দিতে সক্ষম। টিকার ওপর থেকে ভরসা হারানো কোনো কাজের কথা নয়। কারণ টিকা সবসময়ই গুরুতর অসুস্থতা, হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যুর ঝুঁকি কমায়।’
এই ধরন প্রসঙ্গে আফ্রিকার সেন্টার ফল এপিডেমিক রেসপন্স অ্যান্ড ইনোভেশনের পরিচালক টুলিও টি আলজেরিয়া বলেন, অস্বাভাবিকভাবে এটি রূপান্তরিত হয়েছে এবং অন্য যেকোনো ধরন থেকে এটি আলাদা। তিনি বলেন, ‘এই ধরন আমাদের হতবাক করেছে।’ টি আলজেরিয়া বলেন, সব মিলে ৫০ বারের মতো জিনবিন্যাস পরিবর্তিত হয়ে নতুন অমিক্রন ধরন রূপ পেয়েছে। আর এর স্পাইক প্রোটিনের বৈশিষ্ট্য বদলেছে ৩০ বারের বেশি।
ইউরোপের দেশগুলোতে ‘ওমিক্রন’ শনাক্তের সংখ্যা এখন পর্যন্ত একশর নিচে থাকলেও চিকিৎসা কর্মকর্তারা নতুন করে আরও সংক্রমণের তথ্য পাচ্ছেন।
‘ওমিক্রন’-এর ঝুঁকি ‘অনেক বেশি’ জানানোর একদিন পর গত মঙ্গলবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা টিকা নেননি এমন ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তি এবং অসুস্থ ও স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছেন এমন ব্যক্তিদের ‘ভ্রমণ স্থগিত করার পরামর্শ’ দিয়েছে।