প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২১, ১২:২০ পিএম (ভিজিট : ৩২৪)
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাঈল হোসেন চৌধুরী ওরফে সম্রাটের বিরুদ্ধে করা অর্থপাচার মামলার তদন্ত এখনও শেষ হয়নি। তদন্তের অংশ হিসেবে তথ্য পেতে মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরকে চিঠি দিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তবে এখনও সেই চিঠির জবাব আসেনি। ফলে মামলার চার্জশিট আটকে আছে। কবে সেই তথ্য সিআইডির হাতে আসবে সেটা এখনও জানাতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা। সিআইডির একটি সূত্র জানায়, সম্রাটের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের মামলা দুটি সিআইডি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছে। তদন্তের অংশ হিসেবে তারা অর্থপাচারের তথ্য পেতে ইতোমধ্যে দুই দেশকে চিঠিও দিয়েছে। গত বছরের ২৫ অক্টোবর এ চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু বছর পেরিয়ে গেছে। এখনও কোনো ধরনের জবাব বা তথ্য মেলেনি। দেশগুলো তথ্য দেবে কি না বা তাদের হাতে এ সংক্রান্ত তথ্য আছে কি না সেটাও স্পষ্ট করেনি। তবে সিআইডির আশা, তারা তথ্য পাবে। তথ্য না পাওয়া পর্যন্ত আটকেই থাকবে এ মামলার তদন্ত। একই সঙ্গে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করার বিষয়টিও। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, করোনা মহামারির কারণে দেশগুলোতে লকডাউন চলছে। অধিকাংশ অফিস বন্ধ ছিল। এসব কারণেও তথ্য পেতে হয়তো দেরি হচ্ছে।
এ বিষয়ে সিআইডির এক কর্মকর্তা বলেন, সম্রাট মার্কেট, ফুটপাথের পাশাপাশি ক্লাবগুলোতে ক্যাসিনো চালিয়ে যে চাঁদার টাকা পেতেন তার অধিকাংশই বিদেশে পাচার করেছেন। দেশে খুব সামান্য পরিমাণই টাকা আছে তার। বিদেশে পাচার করা টাকা দেশগুলোর ব্যাংকে জমিয়ে রেখেছেন। জমি, ফ্ল্যাট বা বাড়ি কিনেছেন বলে মনে করা হচ্ছে। তবে সেটি চিঠির জবাবে জানা যাবে। এখন শুধু বিষয়টি প্রমাণের জন্য সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার থেকে তথ্য দরকার। এ জন্য দেশগুলোর আর্থিক তথ্য সরবরাহ করে এমন কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিয়েছে সিআইডি। সেই প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে তথ্য পেতেই এত দেরি হচ্ছে। জবাব পেলেই তারা দ্রুত তদন্ত শেষ করতে পারবেন বলে আশাবাদী।
তিনি জানান, সিআইডি দেশ দুটিতে পাঠানো চিঠিতে সম্রাটের অর্থপাচারের তথ্য পেতে নানা বিষয় উল্লেখ করেছে। তার মধ্যে কত টাকা পাচার করা হয়েছে, কোন ব্যাংকে কত টাকা জমা আছে, সেখানে তার নামে সম্পত্তি, ফ্ল্যাট বা বাড়ি কেনা হয়েছে কি না। এ ছাড়াও এই টাকা কীভাবে কার মাধ্যমে দেশগুলোতে নেওয়া হয়েছে সেটাও জানতে চেয়েছে সিআইডি।
সিআইডির আরেকটি সূত্র জানায়, যুবলীগ নেতা সম্রাট যে অর্থপাচার করেছেন তার প্রমাণ সিআইডির প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে। এখন শুধু দুই দেশ থেকে তথ্য প্রয়োজন। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় যুবলীগ নেতা সম্রাট যে অর্থ পাচার করেছে তার সব ডকুমেন্টস তাদের হাতে আসামাত্রই তদন্ত রিপোর্ট জমা দেবেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ক্যাসিনো কাণ্ডের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সম্রাটকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পারে, মতিঝিলের ছয়টি ক্লাব থেকে প্রতি সপ্তাহে ৬০ লাখ টাকা দেওয়া হতো তাকে। তিনি এসব টাকা দিয়ে সংসার চালানো, দলীয় নেতাদের নিয়ন্ত্রণ ও সিঙ্গাপুরে ক্যাসিনো খেলার পাশাপাশি পাচারও করেছেন। এ ছাড়াও গুলিস্তানের ছয়টি মার্কেট, মতিঝিল ও গুলিস্তানের ফুটপাথ থেকে চাঁদা পেতেন।
২০১৯ সালের অক্টোবরে মতিঝিলের ক্লাবপাড়ায় বিভিন্ন ক্লাবে অভিযান চালায় র্যাব। ক্লাবগুলোর কয়েকটি থেকে বিপুল পরিমাণ ক্যাসিনো খেলার সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। সে সময় চাউর হয়ে যায় এসব ক্লাবে ক্যাসিনো চালানো ও নিয়ন্ত্রণের হোতা ছিলেন সম্রাট। এরপর ক্যাসিনো কাণ্ডে বিভিন্ন জনের নামে অর্থ পাচারসহ ১৪টি মামলা হয়। এর মধ্যে সম্রাটের নামেই চারটি। ইতোমধ্যে সম্রাটের দুটিসহ ১১টি মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। সেগুলো আমলেও নিয়েছেন আদালত। তদন্ত আটকে থাকায় সম্রাটের বিরুদ্ধে হওয়া অর্থ পাচারের মামলা দুটির অভিযোগপত্র দেওয়া সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে সিআইডির অর্গানাইজড টিমের বিশেষ পুলিশ সুপার হুমায়ূন আহমেদ সময়ের আলোকে বলেন, আমরা এ বিষয়ে তথ্য চেয়ে মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরকে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু এখনও তারা কোনো জবাব দেয়নি। ফলে তদন্ত আটকে আছে। তাদের কাছ থেকে তথ্য পেলেই আমরা তদন্ত রিপোর্ট দিতে পারব।