আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় নাঙ্গাহার প্রদেশের রাজধানী জালালাবাদ শহরে অন্তত ৩টি বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। তালেবান কর্মকর্তাদের বহনকারী গাড়িকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে এসব বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। একজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে জানিয়েছে, বিস্ফোরণে কমপক্ষে ২ জন নিহত ও ২০ জন আহত হয়েছে।
বিস্ফোরণের লক্ষ্যবস্তু তালেবান: প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে দেওয়া মার্কিন বার্তা সংস্থা এপির খবরে ৩ জনের নিহত হওয়ার কথা বলা হয়েছে। এদিকে কাবুলে পৃথক এক বিস্ফোরণে আরও ২ জন আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। এখন পর্যন্ত কেউ হামলার দায় স্বীকার করেনি। এদিকে হতাহতদের মধ্যে তালেবান সদস্য আছেন কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এদিকে পুলিশ সূত্রের বরাতে ডয়চে ভেলে জানিয়েছে, রাজধানী কাবুলেও শক্তিশালী বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। এতে ২ জন আহত হয়েছেন। তবে এই হামলার লক্ষ্যবস্তু কী ছিল, সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। গত মাসে কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া তালেবান সম্ভবত আফগানিস্তানের নারী বিষয়ক মন্ত্রণালয় বন্ধ করে দিয়ে সে জায়গায় এমন একটি মন্ত্রণালয় চালু করছে, যা একসময় কঠোর ধর্মীয় নিয়মকানুন মানতে বাধ্য করত।
শুক্রবার আফগানিস্তানের নারী বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রণালয়ের প্রতীক সরিয়ে নেওয়া হয় এবং তার বদলে নৈতিকতা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতীক বসানো হয় বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি।
নারী মন্ত্রণালয় হয়ে গেল নীতিনৈতিকতা বিষয়ক মন্ত্রণালয়: আফগানিস্তানে নারী বিষয়ক মন্ত্রণালয় বন্ধ করে দিতে চাইছে তালেবান। এ মন্ত্রণালয়কে নীতিনৈতিকতা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে বদলে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। নারী বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নামফলক মুছে ফেলে বসানো হয়েছে নীতিনৈতিকতা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ফলক।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে আফগানিস্তানের বেশ কিছু ভিডিও ছড়িয়েছে। এতে দেখা যায়, নারীরা কর্মস্থলের বাইরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। তারা ভেতরে ঢুকতে চাইছেন কিন্তু তালেবান সদস্যরা তাদের ঢুকতে দিচ্ছেন না। তবে এ ঘটনা একেবারে অপ্রত্যাশিত নয়। কারণ এর আগে যখন তালেবান ক্ষমতায় ছিল, তখন নারীরা বাইরে কাজ করতে পারেননি।
আফগানিস্তানে নীতিনৈতিকতা বিষয়ক মন্ত্রণালয় আগেও ছিল। তবে তালেবান ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে এই মন্ত্রণালয়ের মধ্য দিয়ে কট্টর ধর্মীয় মতাদর্শ বাস্তবায়নে কাজ করেছে। যদিও এরপর অবস্থার পরিবর্তন হয়েছিল; তবে নারীরা এখন ভয়ে আছেন। তারা আশঙ্কা করছেন, নারীদের যে অগ্রগতি, তা থমকে যেতে পারে নতুন এই তালেবান সরকারের কারণে।
তালেবান সরকার প্রসঙ্গে বিবিসির বিদেশ বিষয়ক প্রধান প্রতিবেদক লাইস ডাউসেট বলেছেন, তালেবান বেশ কিছু প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তারা বলেছিল, আফগানিস্তান যে বদলে গেছে, এটা তারা বুঝতে পেরেছে। কিন্তু সময় গড়িয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের প্রতিশ্রুতি ও রাজনীতির মধ্যে ফারাক স্পষ্ট হয়ে উঠছে। যদিও তালেবান সদস্যরা নতুন নৈতিকতা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষে অবস্থান নিয়ে বলছেন, ইসলাম রক্ষা করাই এ মন্ত্রণালয়ের প্রধান উদ্দেশ্য।
তালেবানের কাছ থেকে চিঠি পেয়েছেন গুতেরেস: জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্থোনিও গুতেরেস বলেছেন, তিনি তালেবানের কাছ থেকে একটি চিঠি পেয়েছেন। সেই চিঠিতে তালেবান উল্লেখ করেছে, তাদের সদস্যরা জাতিসংঘের কর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করবে। এ ছাড়া নারী অধিকার নিয়েও কথা বলেছে তারা। এ নিয়ে রাশিয়ার বার্তা সংস্থা স্পুটনিককে গুতেরেস বলেছেন, ‘ত্রাণসহায়তা নিয়ে তালেবানের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। কোনো ধরনের বৈষম্য ছাড়া পুরো আফগানিস্তান জুড়ে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম বাড়ানো, জাতিসংঘে কর্মরতদের সুরক্ষা, নারী অধিকার ইস্যুতেও তালেবানের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।’