ই-পেপার শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪

দালালির টাকায় জাহাজ কেনা ও রিসোর্ট তৈরির পরিকল্পনা
প্রকাশ: বুধবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৩:০৭ এএম  (ভিজিট : ২৪০)
কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দরে ২০০১ সালে দৈনিক ১৩০ টাকা মজুরিতে চুক্তিভিত্তিক কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে চাকরি নেন নুরুল ইসলাম (৪১)। চাকরি নিয়েই শুরু হয় শুল্ক ফাঁকিতে সহযোগিতা, দালালির মাধ্যমে পণ্য খালাস ও মাছের আড়ালে ইয়াবা ব্যবসাসহ নানা অবৈধ কর্মকাণ্ড। এসব কাজে শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে গত ২০ বছরে প্রায় ৪৬০ কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন ১৩০ টাকার সেই দিনমজুর কম্পিউটার অপারেটর নুরুল ইসলাম। রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে নামে-বেনামে বেশ কয়েকটি বাড়ি, অনেকগুলো প্লট ছাড়াও সম্প্রতি সাভারে রিসোর্ট তৈরি ও বন্দরে একটি জাহাজ কেনার পরিকল্পনা করছিলেন তিনি। অবশেষে একটি গোয়েন্দা সংস্থা ও র‌্যাবের যৌথ অভিযানে সোমবার রাতে মোহাম্মদপুর থেকে নুরুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। অন্যদিকে গতকাল সন্ধ্যার দিকে নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় জাল টাকা ও মাদকের পৃথক দুটি মামলা দিয়েছে র‌্যাব। নুরুল ইসলামকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলেও জানিয়েছেন র‌্যাব ও পুলিশের কর্মকর্তারা।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার আল মঈন বলেন, গ্রেফতারকালে নুরুলের কাছ থেকে ৩ লাখ ৪৬ হাজার ৫০০ জাল টাকা, ৩ লাখ ৮০ হাজার মিয়ানমারের মুদ্রা, ৪ হাজার ৪০০ পিস ইয়াবা ও নগদ ২ লাখ ১ হাজার ১৬০ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, নুরুল ২০০১ সালে টেকনাফ স্থলবন্দরে চুক্তিভিত্তিক দৈনিক ১৩০ টাকা বেতনে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে চাকরি নেন। সময়ের পরিক্রমায় ৪৬০ কোটি টাকার সম্পদের মালিক বনে যান তিনি। এই টাকা দিয়ে তিনি সাভারে একটি রিসোর্ট ও বন্দরে একটি জাহাজ কিনতে চেয়েছিলেন।

র‌্যাব মুখপাত্র বলেন, গ্রেফতার নুরুল টেকনাফ বন্দরকেন্দ্রিক দালাল সিন্ডিকেটের মূল হোতা। তার সিন্ডিকেটের সদস্য ১০ থেকে ১৫ জন। সিন্ডিকেটটি টেকনাফ বন্দরে মিয়ানমার থেকে আসা পণ্য খালাস, পরিবহন সিরিয়াল নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি অবৈধ মালামাল খালাসে সক্রিয় ছিল। এ ছাড়া কাঠ, শুঁটকি, আচার ও মাছের আড়ালে ইয়াবাসহ অবৈধ পণ্য নিয়ে আসত। চক্রটি টেকনাফ বন্দর, ট্রাকস্ট্যান্ড, বন্দর শ্রমিক ও জাহাজের আগমন-বহির্গমন নিয়ন্ত্রণ করত। এ ছাড়াও নুরুলের নামে-বেনামে বিভিন্ন ব্যাংকে মোট ১৯টি অ্যাকাউন্টের খোঁজ পাওয়া গেছে। অবৈধভাবে গড়া এসব বিপুল অর্থ-সম্পদ ‘বৈধ’ দেখাতে নানা নামে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করেন তিনি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- এমএস আল নাহিয়ান এন্টারপ্রাইজ, এমএস মিফতাউল এন্টারপ্রাইজ, এমএস আলকা এন্টারপ্রাইজ, আলকা রিয়েল এস্টেট লিমিটেড এবং এমএস কানিজ এন্টারপ্রাইজ অন্যতম। গ্রেফতার নুরুলের মোহাম্মদপুরের বাসায় জাল টাকা পাওয়া গেছে। তিনি এই জাল টাকার ব্যবসারও সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিলেন।

র‌্যাবের কর্মকর্তারা জানান, রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ছয়টি বহুতল বাড়িসহ ঢাকার সাভারের আমিনবাজারের অদূরে বড়বরদেশী এলাকায় রয়েছে সাতটি প্লটের বিশাল আয়তনের জমি, যার আনুমানিক মূল্য ১৬৫ কোটি টাকা। টেকনাফ শহরে জমি ও বাগানবাড়িসহ রয়েছে ২০ কোটি টাকার সম্পদ। কক্সবাজারের সেন্টমার্টিনে রয়েছে ২০ শতক জমি, যার মূল্য প্রায় ১২ কোটি টাকা। ভোলা সদর উপজেলায় রয়েছে প্রায় ১২ কোটি টাকা মূল্যের জমিসহ স্ত্রীর নামে গাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে নগদ টাকাসহ দৃশ্যমান অর্থ-সম্পদ প্রায় ৪৬০ কোটি টাকার বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

নুরুলের সঙ্গে কারা জড়িত- এমন প্রশ্নের জবাবে র‌্যাব মুখপাত্র আল মঈন জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি কারও নাম বলেননি। পরবর্তী সময়ে জিজ্ঞাসাবাদে নাম জানা যাবে। তবে অনেকেই তার কাজে সহযোগিতা করেছেন। কম্পিউটার অপারেটর থাকাকালে বন্দরের বেশিরভাগ লোকের সঙ্গেই তার সুসম্পর্ক ও সখ্য গড়ে ওঠে। ফলে স্বার্থসংশ্লিষ্ট কাজ করতেও সুবিধা হতো। নুরুলের রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততা রয়েছে কি না এমন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততা না থাকলেও ২০০১ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত বন্দরকেন্দ্রিক অনেকের সঙ্গেই যোগাযোগ ছিল তার।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মোহাম্মদপুর থানার ওসি আব্দুল লতিফ সময়ের আলোকে বলেন, র‌্যাবের পক্ষ থেকে নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় জাল টাকা ও মাদকের পৃথক দুটি মামলা করা হয়েছে। সন্ধ্যায় আসামি ও আলামতগুলো হস্তান্তর প্রক্রিয়া চলছিল।




এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: কমলেশ রায়, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close