মেয়ের শ^শুরবাড়িতে ইফতারি সামাজিকতার নামে অপসংস্কৃতি!
প্রকাশ: শুক্রবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০০ এএম (ভিজিট : ৭৫৪)
ইসমাইল মাহমুদ
প্রতিবছর রমজানুল মোবারক আমাদের জীবনে আসে রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের বার্তা নিয়ে। এই মাসের নানা নেয়ামতের মধ্যে অন্যতম নেয়াম ত হলো ইফতারি। সারা দিন রোজা পালন করে নিজে ইফতার করার পাশাপাশি অন্য রোজাদারকে ইফতার করানোর মধ্যে রয়েছে অফুরন্ত সওয়াব ও বরকত। এ সম্পর্কে হজরত মোহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানে কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, সে ব্যক্তির গুনাহ মাফ হবে এবং একই সঙ্গে রোজাদার ব্যক্তির সমপরিমাণ সওয়াব সে-ও পাবে।’ সাহাবিরা রাসুলকে (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর নবী, আমাদের মধ্যে এমন অনেক লোক আছে যারা অন্যদের ইফতার করানোর সামর্থ্য নেইÑ তারা কী করবে?’ জবাবে রাসুল (সা.) বললেন, ‘কাউকে পেট ভরে ইফতার করাবে এমন কোনো শর্ত নেই। কেউ কোনো রোজাদার ব্যক্তিকে একটি মাত্র খেজুর বা পানি দ্বারা ইফতার করালেও সে সমপরিমাণ সওয়াব লাভ করবে। এতে রোজাদারের সওয়াবের কোনো কমতি হবে না বরং আল্লাহ নিজের রহমতের ভান্ডার থেকে এ সওয়াব প্রদান করবেন।’
তবে আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় ইফতারি নিয়ে নানা অপসংস্কৃতি চলমান। বিশেষ করে দেশের সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে মেয়ের শ^শুর বাড়িতে প্রথম রমজানে, ১৩ রমজানের আগে বা শেষ রমজানের আগে ইফতার প্রদানের প্রচলন রয়েছে। এর কোনো যৌক্তিকতা পবিত্র ধর্ম ইসলামে নেই। এতে একদিকে খাবারের অপচয় বাড়ে অন্যদিকে সামাজিক অসাম্যের রেশও দেখা দিতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মেয়ের শ^শুর বাড়ি থেকে মেয়ের বাবার বাড়িতে ইফতারের চাহিদা পাঠানো হয়।
চাহিদামতো ইফতার সামগ্রী না পেলে মেয়েকে কটু কথা বা গালমন্দ শুনতে হয়। যা ইসলাম কোনোভাবেই সমর্থন করে না। তবে কেউ যদি সওয়াবের মনোভাব নিয়ে মেয়ের শ^শুর বাড়িতে বা আত্মীয় বাড়িতে নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী ইফতার সামগ্রী পাঠায় এতে অসুবিধার কিছু নেই। কিন্তু চরম দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি মুসলিম সমাজ ব্যবস্থায় রমজান মাসে মেয়ের শ^শুর বাড়িতে ইফতারি প্রদান নিয়ে বর্তমানে যে নিয়ম চলমান রয়েছে তা ইসলামের নামে অপসংস্কৃতি ছাড়া আর কিছু নয়। এই প্রথায় ধনী পিতা কর্তৃক নিজের আদরের মেয়ের প্রতি ভালোবাসা মনে হলেও মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত পরিবারের বাবা-ভাইয়ের জন্য নানা সঙ্কটের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
আদরের মেয়ের শ^শুর বাড়ি কর্তৃক চাহিদামতো ইফতারি দিতে গিয়ে অনেক দরিদ্র পিতা সুদে ঋণ বা ধারদেনা করতে বাধ্য হচ্ছেন। অনেক গরিব পিতা নিজের পরিবারকে অনেক সময় অভুক্ত রেখে মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে কার্টন ভর্তি করে ইফতারি পাঠাচ্ছেন মেয়ের শ^শুর বাড়িতে। অনেক মেয়ের শ^শুর বাড়ি থেকে বলা হয় সেই প্রাচীনকাল থেকে এ প্রথা প্রচলিত। তাই এ প্রথা না মানলে মেয়েকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন পর্যন্ত করা হয়। ইসলামের নামে এসব অপসংস্কৃতি কোনোভাবেই সওয়াবের কাজ নয়। উপরন্ত তা অত্যন্ত গুনাহের কাজ। তাই আমাদের এসব অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো প্রয়োজন। পবিত্র কোরআন ও হাদিসবহির্ভূত কোনো কিছু ইসলামে গ্রহণযোগ্য নয়। আর এসব নিঃসন্দেহে সামাজিক অসাম্যের দুয়ার উন্মুক্ত করে দেয়।